বিএনপিকে নির্বাচনে যাবার পরামর্শ দিলেন সুষমা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকায় ২৪ ঘণ্টার ঝটিকা সফরে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি আর রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে কথা বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। পৃথক বৈঠকে খালেদা জিয়ার কাছে বিভিন্ন ‘সমস্যার’ কথা শুনে তাকে আগামী নির্বাচনে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। পরের বৈঠকে রওশনের মুখে শোনেন ‘আত্মতুষ্টি’র কথা।

রোববার রাত ৮টা থেকে সোয়া ৯টা পর্যন্ত প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সোয়া এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক দুটি অনুষ্ঠিত হয়। এগুলোতে অংশ নেওয়া একাধিকপক্ষের দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে জানা গেছে, ৮২০ নম্বর কামরায় বিশেষ ব্যবস্থাপনায় স্থাপিত কক্ষে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের সঙ্গে কথা হয় সুষমা স্বরাজের।

বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, তাদের সঙ্গে সুষমা স্বরাজের কথা হয়েছে আগামী নির্বাচন নিয়ে। তারা দাবি করেছেন, বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায় ভারত। আর জাপার নেতারা জোর দিয়েই বলছেন, সুষমার সঙ্গে আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনও কথাই হয়নি তাদের। কারণ তারা মনে করেন আগামী নির্বাচনের এখনও অনেক সময় বাকি।

যদিও সোনারগাঁও হোটেলে সরেজমিন চিত্র ছিল অনেকটা এমন— বৈঠক শেষে উভয় দলের নেতাদের শরীরী ভাষা শুরুর মতো ফুরফুরে ছিল না। বিএনপির বৈঠক শেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য নেতারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আর রওশন এরশাদ নিজেই মুখোমুখি হয়েছেন গণমাধ্যমের।

একাধিক সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে দলটিকে আগামী নির্বাচনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। পাশাপাশি প্রসঙ্গক্রমে অভিযোগ করা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়ে বিদেশে পাঠিয়েছে সরকার। এ প্রসঙ্গে বিএনপির মন্তব্য, বিচার বিভাগের মতো সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানই ধ্বংস করে দিয়েছে সরকার।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকশেষে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজ করছে সেই সম্পর্কে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আসন্ন নির্বাচন নিয়েও বিএনপি চেয়ারপারসন আলোচনা করেছেন। যে সমস্যাগুলো রয়েছে তা তুলে ধরেছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব সমস্যার কথা শুনেছেন বলেও জানান তিনি।

বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বৈঠকের বিষয়ে মহাসচিব সবই বলেছেন। তবে ভারত সবসময় বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। বিএনপিকে ভারত আগামী নির্বাচনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তা বলতে পারবো না। তবে তারা সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন চান।

একটি সূত্র জানিয়েছে, সুষমা স্বরাজকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফ করেন খালেদা জিয়া। এ প্রসঙ্গে সুষমা স্বরাজ বৈঠকে টুকটাক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানান। সূত্রটিও এও জানায়, বৈঠকে প্রসঙ্গক্রমে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিদেশগমণের বিষয়টি ওঠে। এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে সুষমাকে বলা হয়, সরকার প্রধান বিচারপতিকে জোর করে ছুটি দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। যদিও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল এ বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এমনকি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংহের ভূমিকার বিষয়টি মনে করিয়ে দিলে মহাসচিব বলে দেন, পুরো বৈঠকে যা হয়েছে আমি জানিয়েছি। এর বাইরে কিছু নেই।

রোহিঙ্গা ইস্যু ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রতিপাদ্য করে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে সাংবাদিকদের বিএনপির মহাসচিব এও বলেন, নির্বাচন যেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় এবং নির্বাচন কমিশন যেন তাদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারে সুষমা স্বরাজ সেইসব আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

শিডিউল অনুযায়ী  রোববার রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত খালেদা-সুষমা বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও তা দীর্ঘ হয়েছে আরো ১৫ মিনিট। দলের মহাসচিবও জানান, প্রায় ৪৫ মিনিট বৈঠক হয়েছে। তবে দু’জনের মধ্যে ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠক হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বৈঠকে অংশ নেওয়া অন্তত তিনটি সূত্র উত্তর দেয়নি।

জাপার ‘আত্মতুষ্টি’
খালেদা জিয়ার পর জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সুষমা স্বরাজ। জাপা সূত্রের দাবি, রাত পৌনে ৯টার দিকে শুরু হয়ে বৈঠকটি স্থায়ী হয় আধঘণ্টা। তবে সোনারগাঁও হোটেলের একটি সূত্র জানায়, সুষমা-রওশনের বৈঠকটি স্থায়ী ছিল ১৫ মিনিট।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে রওশন এরশাদ জানান— তার সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যু, তিস্তা চুক্তি, সড়ক সংযোগ নিয়ে সুষমার কথা হয়েছে। আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেননি তারা। রোহিঙ্গা ও তিস্তা ইস্যুতে তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন। একইসঙ্গে সুষমাও রওশনকে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।

দলটির একজন সদস্য জানান, বৈঠকে সুষমা স্বরাজকে বর্তমান সংসদের বিষয়ে বলা হয়। ওই নেতার ভাষ্য, ‘আমরা বলেছি, বর্তমান সংসদ অনেক কার্যকর। এর আগের মেয়াদে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মাত্র ৯ দিন সংসদে গিয়েছিলেন।

জাপার প্রতিনিধি দলের সদস্য তাজুল ইসলাম এমপি বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। নির্বাচনের তো এখন অনেক সময় আছে। তবে আমরা বর্তমান সংসদ যে আগের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর তা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছি। তিনিও নিজেই বিষয়টি জানেন বলে জানিয়েছেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া জাপার প্রেসিডিয়ামের সদস্য এসএম ফয়সল চিশতী বলেন, আমি সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধে সুষমা স্বরাজের হস্তক্ষেপ কামনা করেছি। তিনিও বলেছেন, সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধে পদক্ষেপ নেবেন।

রওশন এরশাদের সঙ্গে সুষমা স্বরাজের এটি দ্বিতীয় বৈঠক। এর আগে ২০১৪ সালের জুনে সংসদ ভবনে আলোচনায় বসেছিলেন তারা। আর খালেদা জিয়ার সঙ্গে ২০১২ সালে ভারতে ও ২০১৪ সালে সোনারগাঁও হোটেলে বৈঠক করেছেন ভারতের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর